জাতীয় প্রযুক্তি দিবস

আজকের দিনেই নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হয়েছিল ভারত। ষষ্ঠতম পরমানু শক্তিধর  দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল ভারত। ১৯৯৮ সালের আজকের দিনেই রাজস্থানের পোখরানে সফলভাবে পরমাণু বোমা পরীক্ষা করা হয়। পরের বছর থেকে এই দিনটি দেশে জাতীয় প্রযুক্তি দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।

শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। স্মাইলিং বুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল ভারত। তাতে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল মিশ্রিত। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আলোচনায় ঢেউ উঠেছিল। ভারতের পদক্ষেপে সমালোচনার ঢেউও উঠেছিল যথেষ্ট।

পরমানু শক্তির ব্যবহারে ‘শান্তিপূর্ণ’ শব্দটি ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক্ষেত্রে। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যার জেরে কিছুটা শ্লথ হয়ে যায় এ সংক্রান্ত গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরিক্ষার গতি।

১৯৯৮ সালে দেশের পরমানু গবেষণার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসে। প্রধানমন্ত্রী পদে তখন অটলবিহারী বাজপেয়ী। তদানীন্তন সরকার সামরিক ক্ষেত্রে ভারতকে পরমানুশক্তিধর দেশ হিসেবে প্রতিপন্ন করায় জোর দেন।

ভারতের পরমানু শক্তি বিভাগের প্রধান আর চিদাম্বরম এবং বিজ্ঞানী ড. এপিজে আবদুল কালামের সঙ্গে বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর। পরমানবিক পরীক্ষার কাজে গতি আনার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে।

কঠোর গোপনীয়তায় শুরু হয় প্রস্তুতি। তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল রাজস্থানের পোখরানের বালিয়াড়ী অঞ্চল। মার্কিন স্পাই স্যাটেলাইটের নজর এড়ানো সহজ ছিল না। সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কর্নেল গোপাল কৌশিকের কাঁধে। গোপাল কৌশিক, এপিজে আবদুল কালাম এবং আর চিদাম্বরমের নেতৃত্বে অত্যন্ত কৌশলী চলেছিল প্রস্তুতির কাজ।

কাজ চলতে রাতের বেলা। নিউক্লিয়ার টেস্ট রেঞ্জে যে সমস্ত বিজ্ঞানী যুক্ত ছিলেন তাঁরা সকলেই থাকতেন সামরিক পোষাকে।

মোট ৫টি বোমা দুটো আলাদা ভাগে ভাগ করে বিস্ফোরনের পরিকল্পনা করা হয়। ১-৫ ক্রমে নামকরণ করা হয় পরমানু বোমাগুলির। প্রথম ভাগে ছিল একটি থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা শক্তি-১, একটি ফিশন বোমা শক্তি-২ এবং একটি সাব-কিলোটন বোমা শক্তি-৩। দ্বিতীয় গ্রুপে ছিল দুটি সাব-কিলোটন বোমা শক্তি-৪ ও ৫। ৫টি বোমার মাঝে শক্তি-১ আর শক্তি-২।

১১ মে বিকেল ৩ টে বেজে ৪৩ মিনিটে পরপর তিনটে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তার দু’দিন পর মানে ১৩ মে আরও দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

পরমানু বোমার পরীক্ষায় দেশে এবং বিদেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তীব্র বিরোধীতা করে পাকিস্তান। অর্থনৈতিক প্রতিরোধ আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একই পথে হাঁটে জাপান, কানাডার মতো দেশগুলো।

পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা যাই হোক না কেন এই দিনটি ভারতের বিজ্ঞান প্রযুক্তি চর্চার ক্ষেত্রের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল তাতে কোনও সন্দেহের অবকাশ ছিল না। নিঃসন্দেহে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...